ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পা রেখেই পুরষ্কার ঝুলিতে পুরলেন সুস্মিতা
কেরিয়ারের শুরু থেকেই ব্যতিক্রমী তিনি। বলিউডের গতানুগতিক চিত্রপটে তো নিতান্তই বেমানান। তবে, টিকে থাকার লড়াইয়ে তিনি যে খাঁটি বাঙালি রক্ত বহন করেন, সেটা বোঝা যায় সুস্মিতা সেনের কেরিয়ারগ্রাফ দেখলে। ব্রম্মান্ড সুন্দরী থেকে আরিয়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া―এই দীর্ঘ ও বিচিত্র যাত্রাপথে সুস্মিতা বারবার প্রমান করেছেন তাঁর মেধা, প্রতিভা, স্বাতন্ত্র্য, নিজস্বতা ও একনিষ্ঠতা।
ওয়েব সিরিজ ‘আরিয়া’র সম্পূর্ণটাই দাঁড়িয়ে সুস্মিতার ওপর, এটা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। প্রথম সিজনে সে কথা প্রমান করেছেন তিনি। এরই পাশাপাশি আছেন চন্দ্রচূড় সিং। মোটামুটি আলোর বৃত্তের বাইরেই ছিলেন একদা বলিউডের বেশ কিছু হিট ছবির নায়ক এই পাঞ্জাবি তনয়। বিশেষত গুলজারের ‘মাচিস’ তাঁকে আলাদা পরিচিতি দেয়। একটা কথা স্বীকার করতেই হবে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দৌলতেই বহু হারিয়ে যাওয়া অভিনেতাকে নতুন করে ফিরে পাওয়া যাচ্ছে। বলিউডের ফর্মূলা চরিত্রের বাইরেও অনেকে নিজেদের স্বতন্ত্র ভূমিকা খুঁজে পাচ্ছেন। ক্রাইম সিরিজ ‘সেক্রেড গেমস’-এ সইফ আলি খানের অভিনয় এর উজ্জ্বল প্রমান। ‘আরিয়া’ও আদ্যন্ত ক্রাইম থ্রিলার। আর এই পটভূমিতে সুস্মিতাকে নিয়ে যে ভুল করেননি নির্মাতা জুটি রাম মাধবানি ও সন্দীপ মোদি, তা দর্শকের বিপুল আগ্রহই বলে দিচ্ছে। বাকি আলোচনায় যাওয়ার আগে ‘আরিয়া’-র গল্পের কিছুটা। এটা অবশ্য এখনও এ সিরিজ যাঁরা দেখেননি তাঁদের জন্য।
আরিয়া সারিন। স্বামী তেজ ও তিন সন্তান বীর, অরুন্ধতী ও আদিত্যকে নিয়ে আরিয়ার সংসার। এই সংসারের পরতে পরতে জড়ানো অপরাধের কালো ছায়া। ফলে, প্রতিদিনই ঘটনার ঘনঘটা। এমনই একটি দিন, ছেলে আদিকে স্কুলে পৌঁছবার পথে কোম্পানির পার্টনারদের জরুরি ফোন পেয়ে চলে যায় তেজ। এদিকে আদি সবার অজান্তে গাড়িতে রাখা বাবার বন্দুক তুলে নিয়ে তাক করে স্কুলের বাচ্চাদের দিকে, যারা সবসময় নানাভাবে উত্যক্ত করে আদিকে। অন্যদিকে তেজ অকুস্থলে পৌঁছেই জড়িয়ে পড়ে চরম জটিলতার জালে। হেরোইনের ব্যবসা, তাই নিয়ে শত্রু গ্যাংয়ের সঙ্গে যুদ্ধ, দুজনের মৃত্যু–সব মিলিয়ে চূড়ান্ত ডামাডোলের সৃষ্টি হয়। তেজ বুঝতে পারে, এই মৃত্যুর ঘটনা এখানেই থেমে থাকবে না। সে তার পার্টনারদের বলেও সেকথা।
আর এইসব যখন ঘটছে, তখন আরিয়া তার মা রাজেশ্বরীর কাছে। সেখানেও সুস্থিতি নেই। আরিয়ার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে মাকে নিয়ে যেতে চায় আরিয়া। সেখানে আবার মায়েরও আছে কিছু শর্ত, আরিয়ার বাবা যেন তার বান্ধবীকে বিয়ের আসরে নিয়ে না যায়। তাহলে রাজেশ্বরী যাবে না। পারিবারিক এই জটিলতায় দিশেহারা আরিয়া। তেজ ক্রমশ জড়িয়ে পড়ে অপরাধচক্রের জালে। এর প্রভাব পড়তে থাকে আরিয়ার সংসারে, জীবনে। এসব ক্ষেত্রে যা হয়, মেয়ের বিয়ের পরপরই একদিন গুলিবিদ্ধ হয় তেজ।
আরিয়ার জীবন কখনওই শান্তির ছিল না। এবার একেবারে আগুনের বৃত্তে পা রাখে সে।
ডাচ ড্রামা সিরিজ ‘পেনোজা’-র ছায়ায় নির্মিত ‘আরিয়া’। শুরুতে অবশ্য ফিচার ছবি করার কথা ভেবেই গল্পের রাইট কিনেছিলেন মাধবানি। নানা কারণে সেটা হতে না পারায় ওয়েব সিরিজে এল এই কাহিনী। ডিজনি হটস্টারের অরিজিনাল হিসেবে চিত্রনাট্য লেখা হলো এবং ‘আরিয়া’-র ভূমিকায় এলেন সুস্মিতা। বলা বাহুল্য, এটাই ছিল প্রযোজক মাধবানির মাস্টার স্ট্রোক। মাধবানির সঙ্গে বাকি দুই পরিচালক সন্দীপ মোদি ও বিনোদ রাওয়াতও ভরসা করেন সুস্মিতার ওপর। এই যাবতীয় প্রেক্ষিতেই সুস্মিতার কামব্যাক ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে
ডেবিউ–যা এককথায় ওটিটি বিনোদন মানচিত্রে এক সেনসেশনাল কান্ড ঘটিয়ে দেয়।
এক স্বাধীনচেতা নারী, পরিবারের সুরক্ষা ও স্বামীর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার মাফিয়া গ্যাংয়ে নাম লেখানো, টিকে থাকার জন্য প্রাণপণ লড়াই দর্শক কতটা পছন্দ করেছে পর্দায়, বোঝা যায় সুস্মিতার পুরস্কার প্রাপ্তিতে। ফিল্মফেয়ার ওটিটি এওয়ার্ডে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান সুস্মিতা। ‘আরিয়া’ শুরু হয় ডিজনি হটস্টারে ২০২০-র জুনে। তার পরের মাসেই অর্থাৎ জুলাইতেই সুস্মিতা ও মাধবানি ‘আরিয়া’-র দ্বিতীয় সিজনের ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এই সিরিজ ইন্টারন্যাশনাল এমি এওয়ার্ডস-এও নমিনেটেড হয়েছে সেরা ড্রামা সিরিজ হিসেবে।
‘আরিয়া’-য় অন্যান্য চরিত্রে আছেন নমিত দাস, অঙ্কুর ভাটিয়া, বিকাশ কুমার প্রমুখ। দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফির নেপথ্যে আছেন হর্ষবীর ওবেরয়। সম্পাদনা খুশবু রাজ ও অভিমন্যু চৌধুরী। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশাল খুরানা। মুম্বই, জয়পুর, উদয়পুর ইত্যাদি শহরের বিভিন্ন লোকেশনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে ‘আরিয়া’। সিজন ২-এ সুস্মিতার সঙ্গে পর্দায় দেখা যাবে সিকন্দর খের, ভিরতি ভাগনানি, অঙ্কুর ভাটিয়া, সুগন্ধা গর্গ ও মায়া সারাও প্রমুখকে। প্রথম সিজনের চিত্রনাট্য লেখেন সন্দীপ শ্রীবাস্তব ও অনু সিং চৌধুরী। দ্বিতীয় সিজনের চিত্রনাট্য লেখায় অনুর সঙ্গে যোগ দেন সংযুক্তা চাওলা শেখ। দ্বিতীয় সিজন পরিচালনা করেছেন রাম মাধবানি, বিনোদ রাওয়াত ও কপিল শর্মা। ২৫ নভেম্বর ‘আরিয়া’ সিজন ২-এর প্রোমো মুক্তি পাওয়া মাত্র নড়েচড়ে বসে ওয়েব দুনিয়া। ১০ ডিসেম্বর স্ট্রিমিং শুরু হতেই দর্শকের নজর এক লহমায় ‘আরিয়া’-র প্রতি। এই সিজনে সুস্মিতা আরও প্যাশনেট, আরও কঠিন একশনে স্মার্ট ও ড্যাশিং প্রতিটি পর্বে । তাঁর দুরন্ত গ্ল্যামার ছাপিয়ে ফুটে উঠছে প্রতিশোধের আগুনে জ্বালাময়ী এক নারীরূপ, নাম যার আরিয়া।