Sunday, May 5, 2024
বলিউডলাইম-Light

আরও একবার অর্থবহ ছবিতে মনোজ বাজপেয়ী

টানটান এই থ্রিলারে পরিচালক দেবাশিস মাখানি জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াকু এক বাবার অবস্থা তুলে ধরতে, দারুণ দক্ষতার সঙ্গে সোস্যাল স্যাটায়ারের সঙ্গে পীড়ন ও অত্যাচারের বাস্তবতা মিলিয়েছেন–’জোরাম‘ প্রসঙ্গে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। এনডিটিভি-র শৈবাল চ্যাটার্জি এই ছবিকে চার-চারটি তারকা দিয়ে বলেছেন, প্রেক্ষিত নির্মাণে কিছু সংশয়ের অবকাশ থাকলেও দসরু কেরকেত্তার চরিত্রে মনোজ বাজপেয়ী দর্শককে সেই অনুভূতির ছোঁয়া দেন, যা তাঁদের বাস্তবতার কাছাকাছি পৌঁছে দেয়। একজন অসহায় মানুষের ক্রোধ ও ক্ষোভকে যথার্থ রূপ দেন মনোজ! তাঁর কথায়, ’জোরাম‘ একেবারেই বিনোদনের ছবি নয়, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শককে বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখে এই ছবি, গুরুত্বের নিরিখেই। 

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকেও যেটা বলা হয়েছে, তা মোটামুটি এইরকম–এ ছবিতে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের থেকেও সামাজিক-রাজনৈতিক নাটক বড় হয়ে উঠেছে, একথা ঠিক। তবে, মনোজের অভিনয় দর্শক রুদ্ধশ্বাসে দেখছেন, তাঁর চূড়ান্ত রিয়ালিস্টিক অভিনয়ের গুণে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বা হিন্দুস্থান টাইমস-ও ছবির সমালোচনায় মনোজের জয়জয়কার করেছে। প্রথম সারির সর্বভারতীয় দৈনিকগুলি ছাড়াও কমবেশি সব সংবাদ মাধ্যমেই ’জোরাম‘ সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক খ্যাত ফিল্ম উৎসবে দেখানো হয়েছে জি স্টুডিওজ নিবেদিত ’জোরাম‘। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন শরিক প্যাটেল, অসীমা অবস্থি চৌধুরী, অনুপমা বোস ও দেবাশিস স্বয়ং ! মনোজ ছাড়াও এই থ্রিলারে অভিনয় করেছেন মহম্মদ জিশান আইয়ুব, স্মিতা তম্বে, তন্নিষ্ঠা চ্যাটার্জি, রাজশ্রী দেশপান্ডে প্রমুখ।

একজন মরিয়া বাবা ও তার শিশুকন্যা, অন্তর বিষে জর্জরিত এক প্রতিশোধকামী মা আর তাড়া করে বেড়ানো পুলিশ–ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর এক পটভূমিতে পল্লবিত ’জোরাম‘-এর কাহিনি। সভ্যতার তথাকথিত উন্নয়নে নির্মূল জঙ্গল ও জঙ্গলের আদি মানুষেরা। অন্ধ লোভের উদ্যত থাবার সামনে এই মানুষগুলোর বেঁচে থাকার লড়াই বিদ্রোহের রূপ পাওয়া, এ দেশের চেনা ইতিহাসের অঙ্গ। আর শেষটা যে শুধুই রক্তাক্ত এক অধ্যায়ে পর্যবসিত, সেও তো সকলেরই জানা। বিনোদনের লেশমাত্র অনুপান নেই ’জোরাম‘-এ। যেটা আছে, সেটা হলো জীবন, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত বিনোদনকামী দর্শকের কাছে একেবারে অচেনা এক জীবন। 

প্রশ্ন হলো, সমালোচকদের চোখে এমন উচ্চ প্রশংসিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমৃদ্ধ এক ছবির ভাগ্যে কী ঘটল? এই প্রসঙ্গে মনোজ বাজপেয়ী স্বয়ং কী বলেছেন, আসুন দেখা যাক। একদিকে তিনি আশাবাদী, প্রত্যাশার অতিরিক্ত সাড়া পেয়েছে দেবাশিস মাখিজার লো বাজেটের ডেবিউ ছবি ’জোরাম‘, একেবারে উড়ে যায়নি ‘অ্যানিমাল‘ ঝড়ে! অন্যদিকে গোপন থাকেনি তাঁর হতাশাও। ‘অ্যানিমাল‘ মুক্তির এক সপ্তাহ পরে থিয়েটারে আসে ’জোরাম‘। একই সময়ে মুক্তি পেয়েছিল মেঘনা গুলজারের ‘স্যাম বাহাদুর‘! ‘অ্যানিমাল‘-এর নায়ক রণবীর কাপুর, ‘স্যাম বাহাদুর‘-এ নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভিকি কৌশল। শুধু তাই নয়, বাজেট থেকে ছবির প্রচার–’জোরাম‘ কোনও ক্ষেত্রেই এই দুটি ছবির মুখোমুখি হতে পারে না। 

এদিকে তার পরের সপ্তাহেও এসে গেল রাজু হিরানি ও বলিউড বাদশার ‘ডাঙ্কি‘ এবং প্রভাস অভিনীত ‘সালার‘! ‘অ্যানিমাল‘, ‘স্যাম বাহাদুর‘,‘ডাঙ্কি‘, ‘সালার‘! প্রতিযোগিতা তীব্র হলো ’জোরাম‘-এর জন্য ! বলা বাহুল্য, উপরোক্ত সব ক’টি ছবিই কমবেশি বিগ হাউস, বিশাল অঙ্কের বাজেট, স্টারডম এবং মিডিয়ার আনুকূল্য পেয়ে বাজার গরম রেখেছে। বিনোদন ব্যবসায় মিডিয়া এখন ব্যবসায়িক পার্টনার। ভালো ছবি প্রমোশনের কোনও দায় তার নেই। তাই ’জোরাম‘-এর মতো ছবি মুক্তি পায় প্রায় নিঃশব্দে। 

তাই কিছুটা হলেও মনোজের হতাশ হওয়ারই কথা। এনএসডির এই প্রাক্তনী একেবারে কেরিয়ারের শুরু থেকে শুধুই অর্থবহ ছবিতে অভিনয় করার চেষ্টা করে গিয়েছেন। অর্থকরী লাভের কথা ভাবেননি কখনোই। একদিকে বাণিজ্যিক ছবির পরিচালকরা কিছু চরিত্রের ক্ষেত্রে তাঁকে কাস্ট করতে বাধ্য হয়েছেন। ‘সত্য‘ থেকে ‘বীর জারা’, ‘রাজনীতি’, ‘সরকার’, ‘আরক্ষণ‘, ‘স্পেশাল ২৬’ তার প্রমাণ। তাঁর ঝুলিতে আছে শ্যাম বেনেগলের ‘জুবেইদা‘র মতো ছবি। আর ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর‘ ফ্রাঞ্চাইজি, ‘শূল‘ বা ‘তাণ্ডব‘-এর মতো ছবি যে মনোজ পয়সা রোজগারের জন্য করেন না, সে কথা সকলেরই জানা। ’জোরাম‘-ও যে এই তালিকাভুক্ত একটি ছবি, তা আজ প্রমাণিত। দেবাশিস মাখিজার মতো পরিচালক বা মনোজের মতো অভিনেতারা হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও চেষ্টা করে যাচ্ছেন, ভালো ছবিতে নিজেদের অবদান রাখবার। সংবাদ মাধ্যম এবং দর্শক অর্থাৎ আমরা তাতে কতটা সাড়া দেব, তার ওপরই নির্ভর করবে ভারতীয় সিনেমা ভবিষ্যতে কতটা পরিণতমনস্ক হবে, সেটা !!