Saturday, May 18, 2024
অন্য সিনেমা এবংবিনোদন প্লাস স্পেশাল

তথ্যচিত্রেও গল্প বলা যায়

সিনেমা ওঁদের প্যাশন। প্রতিভা, মেধা, দক্ষতা আর নতুন নতুন ভাবনার আলিঙ্গনে বিচিত্র পথগামী ওঁরা। কেউ পূর্ণদৈর্ঘের ছবি নির্মাণে ব্যস্ত, কেউ তথ্যচিত্র বা ছোট ছবি। কখনও স্বাধীনভাবে, কখনও সামান্য বিনিয়োগ―স্বপ্নের কারিগররা ব্যস্ত তাঁদের নিজের ভুবনে। এইসব সিনেমা পরিচালক ও তাঁদের কাজ নিয়েই এই বিভাগ। আজ থেকে শুরু রাজাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপচারিতা। কথা বলেছেন অজন্তা সিনহা । প্রথম পর্বে মুখবন্ধ। পরের পর্ব থেকে প্রশ্নোত্তর।

নামটা শোনা ছিল। কাজকর্ম সম্পর্কেও জানতাম। সামনাসামনি পরিচয়ের সুযোগ ঘটেনি। সোস্যাল মিডিয়া, আরও পরিষ্কার করে বলতে পারি, ফেসবুকই আমাদের প্রথম আলাপের মাধ্যম। এরপর দূরভাষ যোগাযোগ। এটুকু বলা যায়, তরুণ পরিচালক রাজাদিত্য বন্দোপাধ্যায় নিজগুণেই সিনেমা বিষয়ে আমার যে আগ্রহ ও আকর্ষণ, সেই প্রেক্ষাপটে এক  উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে নিয়েছেন। প্রসঙ্গত,  সিনেমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি তাঁর রক্তে। পারিবারিক সূত্রেই নানা প্রতিভা ও গুণের সমন্বয় ঘটেছে তাঁর মধ্যে। তা সত্ত্বেও বলবো, রাজাদিত্য তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্যকে বহন করেই থেমে থাকেননি। নিজের জন্য স্বতন্ত্র এক পথ খুঁজে নিয়েছেন।

আমি যখন সিনেমা সাংবাদিকতায় আসি, তারও বহু আগে থেকে তথ্যচিত্র নির্মাণে আগ্রহী দেখান বিশিষ্ট পরিচালকবৃন্দ। যদিও, সেইসব তথ্যচিত্র বিষয়ে আমাদের এখানকার স্বল্প সংখ্যক মিডিয়াই কভারেজের ক্ষেত্রে অগ্রসর হয়েছেন। আমাদের বিনোদন, আরও স্পষ্ট করে সিনেমা নিয়ে মাতামাতি করে যে বহুল সংখ্যক মিডিয়া, সেখানে তথ্যচিত্রের বিষয়টি ব্রাত্যই থেকে গেছে। আমি নিজে বরাবরই এক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহ অনুভব করেছি। এর আগে যখন পুরোদস্তুর সাংবাদিকতায়, তখন যে পাতার দায়িত্বে ছিলাম, সেখানেও এই নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছি। তথ্যচিত্র বা স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি যাঁরা বানান, তাঁদের কাজকে সমান গুরুত্বে স্থান দেওয়ার চেষ্টা করেছি। মনে হয়েছে, তথ্যচিত্র মানেই লোকজন ভেবে নেন, যেন একটি রসকষহীন বিষয়, সেটা মোটেই নয়। এখানেও গল্প আছে। আর সে গল্প বানানো নয়। মানুষের যাপনের, প্রকৃতির, পশুপাখির বেঁচে থাকার লড়াইয়ের ইতিহাস সেখানে লিপিবদ্ধ।

এই প্রেক্ষিতেই রাজাদিত্যর স্বতন্ত্র ভাবনা উঠে আসে। তাঁর কথায়, “আমি ফিচার ছবি ও তথ্যচিত্রের মধ্যে কোনও পার্থক্য দেখি না। আমি নিজে ফিচার ছবি ও তথ্যচিত্র, দুইই নির্মাণ করি। একটু গভীরে গিয়ে ভাবলে, দেখবো, আমাদের চারপাশে বা একটু দূরের যে সমাজ, সেখানকার মানুষজনও আমাদের চলার পথের সহযাত্রী। তথ্যচিত্র তো সেইসব মানুষকে নিয়েই।” রাজাদিত্য নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ডায়িং সং অফ দ্য টোটোজ’, ‘বিপন্ন বহুরূপী’ এই ভাবনার সমর্থনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলা যায়। পরের পর্বে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাব আমরা। তবে, তার আগে রাজাদিত্যর ফিচার ছবির কথা।

প্রসঙ্গত, রাজাদিত্য একজন দক্ষ থিয়েটার অভিনেতা ও চিত্রনাট্য লেখক। অভিনয় জড়িয়ে  তাঁর শিরায়-শিরায়। ইউরোপ ও আমেরিকার নানা মঞ্চে অভিনয় করেছেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের স্নাতক রাজাদিত্য ফিল্ম মেকিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন বাল্টিক ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্কুল, ইস্টোনিয়া থেকে। তাঁর ফিচার ছবি ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এর জন্য ইতিমধ্যেই যথেষ্ট খ্যাত তিনি। পৃথিবীর নানা প্রান্তের চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে, ২০১৮-তে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় ‘ডেথ সার্টিফিকেট’। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ আদতে রাজাদিত্য নির্মিত ডেথ ট্রিলজির অন্তর্গত। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এর পর তিনি বানিয়েছেন আরও দুটি ফিচার–’শিবরাত্রি’ ও ‘শববাহিকা’। 

প্রয়াত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের ছোট ভাই তিনি | এছাড়াও প্রয়াত প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও আনন্দমেলা পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক দেবাশিস বন্দোপাধ্যায়ের কনিষ্ঠ পুত্র তিনি। সিনেমা নির্মাণ তাঁর জীবনের অধিকাংশ কর্মকাণ্ড জুড়ে থাকবে, এর প্রস্তাবনা পর্বের শুরু দাদা বাপ্পাদিত্যর হাত ধরেই–একথা বহুবার বলেছেন রাজাদিত্য। অন্যদিকে তাঁর সাহিত্যপ্রীতি, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে বাবা প্রয়াত দেবাশিস বন্দোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য ও অনুপ্রেরণায়। গল্প ও কবিতা দুইই লেখেন রাজাদিত্য। বাবার ও নিজের লেখা ৯টি ছোট গল্প নিয়ে তিনি বানাতে চলেছেন নতুন ফিচার ছবি ‘নাইন্থ ওয়ার্ল্ড’। এটি ভারত -ফিনল্যান্ডের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হবে।

এই বছরের শেষে বা ২০২৩-এর কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হবে রাজাদিত্যর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। (চলবে)