Saturday, May 18, 2024
বিনোদন প্লাস স্পেশাললাইম-Light

সেপ্টেম্বরেই আসছে ‘ব্রহ্মাস্ত্র : পার্ট ওয়ান’

নেপথ্যের হিরো তরুণ বঙ্গসন্তান। চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তিনি। পরিচালক অয়ন মুখার্জির ফ্যান্টাসি একশন ছবি দেখার অপেক্ষায় টানটান তামাম ভারতীয় দর্শক। লিখেছেন অজন্তা সিনহা

শেষ ছবির পর দশ বছর কেটে গেছে। তবে, এই দশটা বছর বসে থাকেননি তিনি। নিবিষ্ট ছিলেন তাঁর স্বপ্নের ছবি ‘ব্রহ্মাস্ত্র : পার্ট ওয়ান শিবা’ নিয়ে। আগামী সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাচ্ছে পরিচালক অয়ন মুখার্জির বহু আলোচিত এবং বহু প্রতীক্ষিত এই ছবি। বলিউডের বিখ্যাত মুখার্জি পরিবারের যোগ্য উত্তরাধিকারী এই তরুণ তাঁর পরিচালনার প্রথম ছবি ‘ওয়েক আপ সিদ’-এই চমকে দেন ছবির ব্যতিক্রমী ও প্রাসঙ্গিক বিষয় এবং তার একেবারে রিয়ালিস্টিক চলচ্চিত্রায়নে। দেখা গেছে তারুণ্যই বরাবর অয়নের ছবিতে প্রাধান্য পায়। পরের ছবি ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-ও নতুন প্রজন্মের আত্মিক সংকট নির্ভর এক চনমনে ছবি। চনমনে উন্মাদনার মধ্যেই গভীর ভাবনা ও উপলব্ধির প্রকাশও মেলে এ ছবিতে।

তবে, ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’ একেবারে পৃথক এক পটভূমি। মিডিয়ার দৌলতে ইতিমধ্যেই প্রায় সবাই জানেন এই বিষয়ে। এবারে এই নবীন পরিচালক প্রাচীনের সঙ্গে নতুন সময়ের মেলবন্ধন রচনা করেছেন। ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অয়ন যা জানিয়েছেন, “ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, তার আধ্যাত্মিক দর্শনের সঙ্গে আজকের সময়কে মিলিয়েই এই ছবি। মূলত সেই সব বিচিত্র অস্ত্র সম্ভার, যা যুগ যুগ ধরে নানা পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে প্রস্তুত হয়েছে এ দেশে, তাই নিয়েই তৈরি ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’। অস্ত্র এবং তার প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয়তা ! আমি শুরু থেকেই জানি, এই বিষয়টা সহজ নয়। ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’ নির্মাণের যাত্রাপথ সুগম হবে না, আমার জন্য। কিন্তু এটাও জানতাম, যে কাজটা করতে চলেছি সেটা মৌলিক ভাবনার বার্তাবাহক, অভিনব, স্বতন্ত্র ও ব্যতিক্রমী।”

এমন এক বিষয়–যথেষ্ট সময় না নিয়ে পর্দায় এর রূপায়ন সম্ভব ছিল না স্বভাবতই। তাঁর শেষ ছবি ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ আর ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’–মাঝের এই দশটা বছর, অর্থাৎ একটি দশক অয়ন ব্যয় করেছেন, শুধু একটি ছবিকে কেন্দ্র করে। ভারতীয় ছবিতে এমন দৃষ্টান্ত নিতান্তই বিরল। এই সময়কালকে অতুলনীয় এক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি নিজেই–”দশ বছর আগে আমি কী ছিলাম এই জার্নির মধ্যে যেতে যেতে সেটা প্রায় ভুলতে বসেছি। এক প্রবল ভাঙচুর চলেছে আমার নিজের মধ্যেও। অনেক নতুন অভিমুখ খুলে গেছে ভাবনার। কত উপলব্ধি ! এই সময়টা না দিলে এ ছবি আমি ঠিক যেভাবে পরিবেশন করতে চেয়েছিলাম, সেটা পারতাম না।”

যাঁরা সবসময় নতুন ও ব্যতিক্রমী ভাবনার ছবি দেখতে চান, তাঁরা এই মুহূর্তে টানটান অপেক্ষায় ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’ নিয়ে। ভারতীয় সিনেমার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’-কে ঘিরে, এ বিশ্বাস স্বয়ং পরিচালকের। ছবির ট্রেলার মুক্তি উপলক্ষে সম্প্রতি তিনি বলেছেন, “আমরা, ভারতীয়রা যতই আধুনিক সময়ে বসবাস করি না কেন, মনেপ্রাণে আমরা আধ্যাত্মিকতায় আজও বিশ্বাসী। কোনও এক পরমা শক্তি আমাদের চারপাশের পরিবেশে প্রোথিত, যা আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সম্পর্ক তৈরি করে, যা চরম আধ্যাত্মিক গুণসম্পন্ন।”

বলিউডে এ যাবত যে যে ধরণের ছবি নির্মিত হয়েছে, তাতে ফ্যান্টাসি এডভেঞ্চার হলো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং একটি ক্ষেত্র। তুলনায় এই বিষয়ে অনেক কম ছবি তৈরি হয়েছে এই কারণেই। বিশাল সময় ও বাজেটের প্রয়োজন। প্রযুক্তির প্রয়োগ বিষয়েও সম্যক জ্ঞান প্রয়োজন। অয়ন এই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “পুরান আমায় বরাবর অনুপ্রাণিত করে। সেই জন্যই এই কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়া।” এ দেশের পুরানকথা এবং পাশ্চাত্যের ফ্যান্টাসি ফিকশন দুইই তাঁকে সমানভাবে টানে। লর্ড অফ দ্য রিংস, হ্যারি পটার ইত্যাদি তাঁর প্রিয় ছবি। হলিউডে মার্ভেল মুভিজ নির্মিত ব্লকবাস্টার ছবিগুলি তাঁর প্রেরণা। অয়নের ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’ যাত্রার ভাবনার সূত্র এই যাবতীয় অনুষঙ্গ। তবে, তিনি প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ওই বিরাট ক্যানভাসের অনুপন্থী হলেও বিষয়ের ব্যাপারে ভারতীয় দর্শনকেই বেছে নিয়েছেন। এটা অয়নের যুক্তিতে ভারতীয় সিনেমার এক অনন্য ও অনাবিষ্কৃত পটভূমি। সমস্ত কঠিনতা কাটিয়ে অয়ন যে আমাদের ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’ উপহার দিতে সক্ষম হচ্ছেন, সেটা নিঃসন্দেহে ভারতীয় দর্শকের সৌভাগ্য। 

তাঁর পছন্দের নায়ক ও প্রিয়বন্ধু রণবীর কাপুর এ ছবিরও নায়ক। এ প্রসঙ্গে অয়ন জানিয়েছেন, “আমি জানি, এখানে আরও অনেক ভালো অভিনেতা আছেন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করতেও নিশ্চয়ই ভালো লাগবে আমার। যেমন রণবীরও অন্যান্য পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছে। আসলে আমাদের মধ্যে বন্ড আর বোঝাবুঝিটা এত ভালো ! এছাড়া রণবীর একজন সুপারস্টার ও অত্যন্ত প্রতিভাশালী একজন অভিনেতা। সবকিছুর উপর, আমার কাজের প্রতি ওর আস্থা ও বিশ্বাস। ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’ বানাতে গিয়ে ওকে ছাড়া ভাবতেই পারিনি।” রণবীর ছাড়াও এ ছবিতে আছেন তাঁর বেটার হাফ আলিয়া ভাট, অমিতাভ বচ্চন, নাগার্জুন এবং মৌনী রায়। অয়নের ভাষায় প্রত্যেকেই ‘ইনক্রেডিবল’ ! রণবীর-আলিয়া এই প্রথম পর্দায় জুটি বাঁধলেন। তাঁদের গাঁটছড়া বাঁধার পর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হতে চলেছে ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’। ওঁরা কে কার জন্য কতটা লাকি বোঝা যাবে ছবি মুক্তির পরই। যদিও অয়ন সব সময়ই রণবীরের জন্য লাকি, সেটা প্রমাণিত।

তবে, যত বড় তারকারাই থাকুন, এ ছবির আসল হিরো পরিচালক অয়ন মুখার্জি। নেপথ্যের রাজা হয়ে ক্যামেরার সামনের মানুষদের চালনা করা শুধু নয়, তিনি ভাবনার স্তর থেকেই অসাধ্য সাধনের কাজটি করেছেন। এই তরুণ বঙ্গসন্তান আমাদের এবারেও গর্বিত করবেন, একথা আগাম বলে দেওয়া যায়। ৩০০ কোটির ওপর বাজেটের এই ছবি প্রযোজনা করেছেন রণবীর কাপুর, অয়ন মুখার্জি, করণ জোহর, হিরু জোহর, অপূর্ব মেহতা ও নমিত মালহোত্রা। গল্প ও চিত্রনাট্য অয়ন মুখার্জি। হুসেন দালাল লিখেছেন ডায়ালগ। সিনেমাটোগ্রাফি ভি মনিকন্ডন, পঙ্কজ কুমার, সুদীপ চ্যাটার্জি, বিকাশ নওলাখা, প্যাট্রিক ডুরক্স। সম্পাদনা প্রকাশ কুরুপ। মিউজিক প্রীতম। লোকেশন বেনারস, বুলগেরিয়া, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, এডিনবার্গ। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর হিন্দি ছাড়াও তামিল, তেলুগু, মালায়ালম এবং কন্নড় ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে ‘ব্রহ্মাস্ত্র…’। দেখবেন স্ট্যান্ডার্ড, থ্রিডি ও আইমেক্স থ্রিডি ফরম্যাটে।