Sunday, May 19, 2024
টেলি-Talk

লীনার সৃজনে কোজাগরীর উত্থান

মন ভালো করা ধারাবাহিক ‘জল থই থই ভালোবাসা’ দেখান হচ্ছে স্টার জলসায়। লিখেছেন অজন্তা সিনহা

বাঙালি টিভি দর্শকের কোজাগরী বসুর সংসারযাত্রায় সামিল হওয়া শুরু বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই। আর শুরুতেই বর্ণময় এই নারী দখল করে নিয়েছে আপামর দর্শক-হৃদয়। এর কৃতিত্ব অনেকটা নিশ্চয়ই পাবেন অপরাজিতা আঢ্য, পর্বে পর্বে কোজাগরীকে জীবন্ত করে তোলার জন্য। তবে, এখানে পৃথকভাবে যেটা বলার, সেটা হলো, এমন এক চরিত্রের স্রষ্টার কথা! বস্তুত সার্বিকভাবেই স্টার জলসার সাম্প্রতিক নিবেদন ‘জল থই থই ভালোবাসা’র কাহিনি ও তার পটভূমিতে সৃষ্ট চরিত্রগুলি এতটাই রিয়ালিস্টিক যে দেখতে দেখতে মনে হবে, নিজেদের যাপন-ছবিকেই দেখছেন। তবে, তারই মধ্যে বড় যত্নে কোজাগরীকে স্থাপিত করেছেন ধারাবাহিকের কাহিনি-স্রষ্টা ও সৃজনশীল পরিচালক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। আদতে কোজাগরী যে কোনও অভিনেত্রীর স্বপ্নের চরিত্র। আর অপরাজিতার মতো অভিনেত্রী যে এমন এক চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরবার সুযোগ পেয়ে, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবেন, সেকথা বলাই বাহুল্য।

এরই পাশাপাশি চরিত্রের মাপে মানানসই হয়ে উঠেছেন কোজাগরীর স্বামী উদ্দালকের ভূমিকায় চন্দন সেন ও শ্বাশুড়ি কনকচাঁপার চরিত্রে অনসূয়া মজুমদার। প্রসঙ্গত, কোজাগরী ও উদ্দালকের বিচিত্র রসের দাম্পত্যে অপরাজিতা ও চন্দনের অন-স্ক্রিন কেমিস্ট্রি পৃথকভাবে দর্শকের নজর কেড়ে নেয়। চন্দন সেন নিঃসন্দেহে নতুন প্রজন্মের কাছে একজন দৃষ্টান্ত ! ছোট ছোট কিছু অভিব্যক্তি ও শরীরী অভিনয়ের দ্বারা কেমন করে চরিত্র ও সিকোয়েন্সকে জীবন্ত করে তোলা যায়, এই ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয়ের বিচ্ছুরণ সেটা বারবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। অনসূয়াও বরাবরের মতোই নিজের অপরিহার্যতার প্রমাণ রাখেন। এবার বসু পরিবারের বাকি সদস্যদের কথা বলা যাক। কোজাগরী-উদ্দালকের দুই ছেলে টিটো (দেবোত্তম মজুমদার) ও টিনটিন (অর্ণব ব্যানার্জি) এবং মেয়ে তোতা (অনুশা বিশ্বনাথন)–এরা যথাক্রমে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ও কলেজ পড়ুয়া। ভাইবোনদের মধ্যে সুন্দর একটা বন্ড দেখতে পাই আমরা। অভিনয়ে সকলেই স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল।

ধারাবাহিকে এছাড়াও আছে টিটোর প্রেমিকা কঙ্কনা বা কোকো (ঈপ্সিতা মুখার্জি), সেও পরিবারের একজন সদস্য। তাকে নিয়ে টিটোর সঙ্গে ভাইবোনের খুনসুটি খুব সহজ ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উঠে আসে। আছে উদ্দালকের ছোট ভাই কুশাঞ্জন ওরফে ছোট (সুদীপ মুখার্জি) ও তার স্ত্রী মিঠি (অদিতি ব্যানার্জি)–দুজনেই ডাক্তার। ওরা পৈতৃক বাড়িতে না থাকলেও আসা-যাওয়া রয়েছে। বৌদির প্রতি ছোটর ভালোবাসা অকুণ্ঠ হলেও, মিঠির কোজাগরীকে নিয়ে মনে জটিলতা আছে। আর সেটা সে গোপনও রাখে না। বসু পরিবারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে উদ্দালকের বোন অনুশ্রী (রাজন্যা মিত্র) ও ঋত্বিক (সুমন ব্যানার্জি)–দুজনেই পেশায় সাংবাদিক। ওদের একটি ছোট মেয়ে আছে, যে এই পরিবারের সকলের অত্যন্ত আদরের। অভিনেতারা প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ। ফলে, পর্বে পর্বে দারুণ মসৃণ এক গতিতে এগিয়ে চলে কাহিনি।

‘জল থই থই ভালোবাসা’র শুরুতে আমরা দেখি স্বামী, পুত্রকন্যা, শ্বাশুড়ি, দেওর, ননদ ও তাদের পরিবার সব মিলিয়ে এক নিটোল সংসারের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কোজাগরী। তার বিচিত্র স্বভাব–একদিকে চরম স্নেহময়ী, কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল। অন্যদিকে বড্ড ছেলেমানুষ। তার সেই ছেলেমানুষী স্বভাবের জন্য মাঝে মাঝেই নানা গোল বাঁধে আর অন্দরের পর্দায় জমে ওঠে নাটক। কন্যা তোতার প্রেমিক ও ভাবী স্বামী রূপের (আদিত্য বকশি) শ্বশুরবাড়ি থেকে বিয়ের কথা ফাইনাল করতে আসবে রূপের বাবা অরুনাংশু (দেবাশিস রায়চৌধুরী) ও মা দর্শনা (নন্দিনী চ্যাটার্জি)। এদিকে পাড়ায় ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে কোজাগরী এবং সেই দশভুজা সাজেই সে এসে দাঁড়ায় রূপের বাড়ির লোকজনের সামনে। দর্শনা, যে কিনা রূপের পাত্রী নির্বাচনে শুরু থেকেই অখুশি, সে তো এই ঘটনাটিকে ইস্যু করবেই। তবে, দর্শক ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছেন, দর্শনার ক্ষেত্রে এই জাতীয় ইস্যুর অভাব হবে না ভবিষ্যতেও।

আদতে, পারিবারিক নিটোল এক মধুর আবেশে এই ধারাবাহিক শুরু হলেও, ক্রমশ দর্শনার ব্যবহার একেবারে ভিন্ন এক অভিমুখে নিয়ে যায় মেগার কাহিনিকে। ধনী ও পশ পরিবারের দর্শনা প্রতি মুহূর্তে তোতা ও তার পরিবারকে, বিশেষত কোজাগরীকে অপমান করার চেষ্টা করে যায়। নন্দিনীর দাপুটে অভিনয়ে দর্শনার জটিল, আত্মকেন্দ্রিক ও দাম্ভিক চরিত্রটি প্রাণ পায়। ‘জল থই থই ভালোবাসা’র অন্যান্য চরিত্ররা হলো প্রজাপতি (ঐন্দ্রি ব্যানার্জি), কোজাগরীর কাকা কর্নেল খাস্তগীর (দুলাল লাহিড়ী), কোজাগরীর তিন বোন খোখো (রূপসা দাশগুপ্ত) ও কাবাডি (দেবশ্রী গাঙ্গুলি) এবং সুইমার (সঙ্ঘশ্রী সিনহা)। এখানে উল্লেখ্য পিতৃমাতৃহীন কোজাগরী ও তার তিন বোনকে মানুষ করেছেন তাদের কাকা। আর বাকি বোনেদের মতোই কোজাগরীর জন্য খেলা-পাগল কাকার ভালোবাসার ডাক ফুটবল।

প্রায় শুরুতেই আমরা পাই আর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, নাম আসমান (ইন্দ্রাশিস রায়)। পর্বে পর্বে গল্পের পট পরিবর্তনে আসমানেরও একটি বড় ভূমিকা থাকবে, তার ইঙ্গিত মিলছে একটু একটু করে। সেই ভূমিকা কোজাগরী না তোতা, কাকে ঘিরে–রহস্য জমাট তাই নিয়েও ! গল্প এর বেশি বললে, পাঠকের আগ্রহ চলে যাবে। এটুকু বলতে পারি, বাঙালি আবেগের সবটুকু উজাড় করে ধারাবাহিকের পটভূমি তৈরির রসদ যুগিয়েছেন লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। আর স্মার্ট ও নিপুণ পরিচালনায় তাকে উপস্থাপিত করেছেন পরিচালক শৈবাল ব্যানার্জি। পর্ব পরিচালনায় সুজিত পাইন যত্নশীল। যথাযথ ও দৃষ্টিনন্দন সেটে পঙ্কজ সাহার ক্যামেরা প্রতি পর্বে জীবন্ত করে তুলছে চরিত্রগুলির মধ্যবর্তী নাটক। দেবজ্যোতি মিশ্রর মিউজিক কাহিনির নিখুঁত অনুসারী। বিশেষত, মেগার সঙ্গীতশিল্পী কোকোর কণ্ঠে শ্রুত গানগুলি এককথায় চমৎকার প্রয়োগ বলা যায়।

সব মিলিয়ে ম্যাজিক মোমেন্টস মোশন পিকচার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রযোজিত ‘জল থই থই ভালোবাসা’ বেশ অন্যরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে আপনার মেগা দর্শনে। এটা তাঁদের জন্য, যাঁরা এখনও ‘জল থই থই ভালোবাসা’য় অবগাহন শুরু করেননি। যাঁরা ইতিমধ্যেই বসু পরিবারের সহযাত্রী হয়েছেন, তাঁরা তো নিবিষ্ট হয়েই গেছেন। চোখ রাখুন স্টার জলসায় সোম থেকে রবি রাত ৯টায়। এছাড়া নতুন-পুরোনো সব পর্বই দেখতে পাবেন ডিজনি হটস্টার-এ।